মেকাট্রনিক্স বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসোসিয়েট প্রফেসরের চমৎকার ব্যাখ্যা

‘প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে কল্পনা করি’
2015,

image

zakaria

ড. মো. শফিকুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর
হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন

image

শিক্ষকতার পাশাপাশি পরমানু বিজ্ঞান,
প্রযুক্তি ও প্রকৌশল

বিষয়ে করছেন বিস্তর কাজ। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও পরমাণু গবেষণা চুল্লিতে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ২০০৩ সালে কাজ শুরু করেন এই শিক্ষক। নিজ গবেষণা পত্রের জন্য ২০০৩ সালে আইইবি ও ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড লাভ

image

করেন। ২০০৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি দেশে-বিদেশে অসংখ্য সেমিনার, মিটিং, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০৭ সাল থেকে তার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ে কলামিস্ট হিসাবে লেখালেখি শুরু করেন। এই ধারাবাহিকতায় মল্লিক এন্ড
ব্রাদার্স এর প্রকাশনায় এবারের বইমেলায় এসেছে তার প্রথম বই “পরমানু শক্তির জানা-
অজানা”।নিজের বই সম্পর্কে, তার মতামত ও ভাবনা নিয়ে ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম এর সঙ্গে
খোলামেলা আলোচনা করেছেন এই শিক্ষক।সাক্ষাতকার নিয়েছেন
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম এর লাইভ প্রতিবেদক হৃদয় কবির ।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : এবারের বইমেলায়
আপনার একটি বই বের হয়েছে। বইটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : এবারের বই মেলায় আমার বইটির নাম “পরমানু শক্তির জানা- অজানা”। বইটি প্রকাশ করেছে মল্লিক এন্ড ব্রাদার্স এবং পরিবেশক অনন্যা। বই প্রসঙ্গে
বলতে গেলে বলতে হয়, ১৯৬১ সালে
বাংলাদেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা হয় পাবনার
রুপপুরে। তখনি এর বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। স্বাধীনতার পর সরকার বিভিন্ন ধরনের আশ্বাস দিয়ে আসছিল তবে আর্থিক ও নানাবিধ জটিলতার জন্য এই কাজ আর দীর্ঘায়িত হয়েছে। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এই পরিকল্পনা হোঁচট খায়। আওয়ামীলীগের একটি সত্যিকারের দুর্বলতা ছিল পারমানবিক
বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়নে। কারণ পরমাণু শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর রাশিয়ার সঙ্গে পরমাণু সমৃদ্ধকরণের চুক্তি করে। এখন এর কাজ দ্রুত গতিতে চলছে।
পরমাণু প্রযুক্তি সম্পর্কে দেশের মানুষের
তেমন কোন ধারণা নেই। দেশের মানুষের
বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক, কৌতূহল ও বিভিন্ন
ধরনের ভুল ধারণা আছে। সাধারণ মানুষ,
ছাত্র-শিক্ষক, বিজ্ঞান মনস্ক ও সকল
শ্রেণীর মানুষের কাছে সঠিক তথ্য
পৌঁছানোর জন্য আমার এই বই। কিভাবে পরমাণু প্রযুক্তি কাজে লাগানো
যায়, বিদ্যুৎ উৎপন্ন ও শান্তিপূর্ণভাবে এর
প্রয়োগ করা যায়, এর ব্যাবহারে কোন প্রকার ক্ষতিসাধন হবে কিনা এসব বিষয়েই বিস্তারিত বলা হয়েছে এই বইটিতে। ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : আপনি তো বই
লিখছেন। ভবিষ্যতে অন্য কোন বিষয়ে বই লিখার ইচ্ছা বা পরিকল্পনা আছে কি না?
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : আমি মূলত পরমাণু যন্ত্র প্রকৌশলী। আর তাই পরমাণু, যন্ত্র বা প্রকৌশল বিষয়ে ভবিষ্যতে ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করবো ও তা প্রকাশ করব।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : আপনি অনেক দিন জাবৎ শিক্ষকতা করছেন। আমরা জানি মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং আপনার হাতে শুরু। এই সম্পর্কে আমাদের কিছু বলুন?
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং আধুনিক প্রযুক্তির একটি ক্ষেত্র। আমি মনে করি মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে সবচেয়ে যুগোপযোগী, উৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে স্মার্ট প্রযুক্তি। এর জ্ঞান ও ব্যবহার ছাড়া শিল্প, কলকারখানাসহ কোনো ইন্ডাস্ট্রি তৈরি সম্ভব না। এটা যদি তরুণ প্রজন্মকে হাতে কলমে শুরু করানো যায় তাহলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কয়েকটি বিষয়কে একত্র করে গঠিত। এখানে মেকানিকেল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স এবং একটি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয় জড়িত। এই তিনটি বিষয়ের একত্রে সম্মিলন ঘটলে একটি চমৎকার বিষয় তৈরি হয় যার নাম মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং।
আধুনিক সব পণ্য এই মেকাট্রনিক্স
ইঞ্জিনিয়ারিং মাধ্যমে উৎপাদন করা সম্ভব। আমাদের দেশে এ সম্পর্কে মানুষের একেবারেই ধারণা নেই। তবে উন্নত বিশ্ব
অনেক আগেই এই সম্পর্কে কাজ করছে। এখন
থেকেই যদি আমরা এর চর্চা না করি, তাহলে
আমরা পিছিয়ে পড়বো। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে
তাল মিলিয়ে চলার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি
সমৃদ্ধি সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়তে
মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৬ সালে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব
বাংলাদেশে এই প্রযুক্তি প্রবর্তনের জন্যে
কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি। তারা আমার
অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই প্রোগ্রাম চালু
করেছে। আমাদের দেখাদেখি পরবর্তীতে
রুয়েট ও বিভিন্ন পলিটেকনিক
ইন্সিটিউটগুলো এই প্রযুক্তি চালু করেছে।
অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেও এই বিষয় চালু হবে বলে আশা করছি।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : আমরা জানি আপনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে
এডভাইজার ও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকাট্রনিক্সের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কি বলবেন?
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : প্রায় অনেকদিন ধরেই আমি এই ইউনিভার্সিটির সঙ্গে জড়িত।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আমি
ভাগ্যবান মনে করি যে তারা এই প্রযুক্তি
নিয়ে পড়ছে। মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
কে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে যত রকমের
ধারণা, তথ্য, উপাত্ত ও সহযোগিতা দরকার তা আমি করব যেন তারা এটির চর্চা করতে পারে ও সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে পারে। একদিন তারা দেশের সম্পদ হয়ে উঠবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : এবার একটু অন্যপ্রসঙ্গ, শিক্ষকতার পাশাপাশি আপনি আর কি করছেন?
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : আসলে আমি
শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন
পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত
কলাম লিখি। সামনে বিজ্ঞান বিষয়ে আরোকিছু বই লেখার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
লেখালেখির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের
গবেষণা কর্মে উৎসাহ প্রদান এবং সহায়তা করছি।
সম্প্রতি আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাবনী
প্রকল্পে ছাত্রদের আধুনিক পরমাণু
বিদ্যুৎকেন্দ্র মডেল নির্মাণে আমি একজন
সুপারভাইজার ছিলাম। প্রকল্পটি উপস্থাপনার পর ঢাবির নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ সেরা হয় এবং রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে পুরস্কৃত করেন।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : আমি তখনি
আত্মতৃপ্ত হবো, যখন সমস্ত ইঞ্জিয়ারিং পণ্য
দেশে তৈরি হবে এবং আমরা প্রযুক্তিতে
স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবো।
পরনির্ভরতা নয় প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে
একুশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। নিজেকে একজন
উন্নত প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে বুঝে
নিতে পারি এই আমার চাওয়া।
ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম : স্যার, আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ড. মো. শফিকুল ইসলাম : আপনাকেও
ধন্যবাদ।
এখান খেকে পোষ্টটি নেওয়া হয়েছে
সংগ্রহে:image

মোহা জাকারিয়া মাসুদ
মেকাট্রনিক্স বিভাগ

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান